যে শহরে থাকবে না ভেদাভেদ ॥ মেয়র আতিক

প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন, যোগাযোগ বৃদ্ধি, বন্ধন বাড়াতে ও প্রতিবেশী কমিউনিটিকে সুদৃঢ় করতেই প্রতিটি স্তরের নাগরিকদের নিয়ে পাড়া উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। একইসঙ্গে সমাজকে এগিয়ে নিতে সকল ভেদাভেদ ভুলে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি নগর গড়ার মূল লক্ষেই এমন উৎসব করা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তিনি। শুক্রবার রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ৬২ নম্বর রোডে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সামাজিক সংগঠন হিরাজে ফর অল-এর উদ্যোগে গুলশান সোসাইটি এবং ডিএনসিসির সার্বিক সহযোগিতায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী প্রতিবেশীদের মধ্যে আন্তঃব্যক্তি ও পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার, সংসদ সদস্য নাহিদ এজহার খান, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অনুষদ সদস্য ও হিরাজে ফর অল-এর প্রতিষ্ঠাতা ড. রেহনুমা করিম, গুলশান সোসাইটির ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড সিভিল সোসাইটির আহ্বায়ক শায়ান শেরাজ, মেরিল এ্যান্ড ফোর্বস’র প্রতিষ্ঠাতা ও হিরাজের ফর অল’র পর্ষদ সদস্য তাজরীন মান্না বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় কাউন্সিলর, ডিএনসিসির উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং গুলশানের বিভিন্ন বয়সের এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। মেয়র আতিক বলেন, আমরা এমন একটি শহরই চাই, যেখানে কোন রকম ভেদাভেদ থাকবে না। সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি নগর গড়াই আমার লক্ষ্য। সমাজে ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, শিশু-বয়স্ক সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কেউ পাবে কেউ পাবে না, কারও সুযোগ থাকবে কারও থাকবে না সেটি হবে না। আমাদের শিশুরা খেলার সুযোগ পাচ্ছে না, তাদের বন্ধু হচ্ছে না, তারা কম্পিউটার আর বইয়ে ডুবে থাকে, এভাবে চলতে থাকলে তারা বিষণœতায় ভুগবে, সেটি আমরা মেনে নিতে পারি না। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো খেলাধুলা ও সামাজিক মেলামেশার অভাবে আমাদের এই তরুণ প্রজন্মের মাদকাসক্ত ও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। আমরা অবশ্যই এটি চাই না। আর সেজন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা চাই এলাকাবাসী সবাই আজ সারাদিন এই উৎসব উপভোগ করবেন, পরিবার নিয়ে রাস্তায় আসবেন, নিজের প্রতিবেশীদের চিনবেন, সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় হবে, নিজ এলাকা ও প্রতিবেশীর জন্য নিজেদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা বাড়বে। আর এতে করে সামাজিক অন্যায়, অবিচার, অস্থিরতা কমে আসবে। এভাবেই আমরা সবাই মিলে সবার ঢাকা গড় তুলতে চাই। তিনি বলেন, আমরা চাই বাবা-মা তাদের সন্তানদের নিয়ে, দাদা-দাদি, নানা-নানিরা তাদের নাতি নাতনিদের নিয়ে নেমে আসবে, সারাদিন গল্প, খেলা, আড্ডায় তারা মানসিকভাবে বিকশিত হবে, তাদের বন্ধুত্ব হবে, তারা একসঙ্গে মিলেমিশে একে অন্যের এবং এই এলাকার উন্নয়নে কাজ করবে। এরপর মেয়র মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথি ও এলাকাবাসী নিয়ে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। তারা দেশীয় পিঠার স্টলে পিঠা উপভোগ করেন, ম্যাজিক শো দেখেন, বায়স্কোপ ও পুতুল নাচ উৎসব আয়োজনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এছাড়া বিভিন্ন খাবারের স্টল, স্বাস্থ্যসেবা স্টল, সিটি কর্পোরেশন স্টল, শো-পিস, পাটের তৈরি ব্যবহার্য্য পণ্যসহ আরও অনেক স্টল আয়োজনকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। অনুষ্ঠানে বড় উইশ বোর্ড, শিশুদের ছবি আঁকার জন্য ক্যানভাস ও রং তুলি, ক্যারামবোর্ড, দাবাসহ নামান খেলার সামগ্রী রাখা হয়। এ সময়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেগুলো নিয়ে আনন্দে মেতে উঠে। অনুষ্ঠানস্থলে মেয়র মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার ক্যারাম ও দাবা খেলেন। পাশাপাশি বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী গানের তালে তালে বায়স্কোপও দেখেন। পরে মেয়র আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে পুরো উৎসবস্থল ঘুরে দেখেন। পাড়া উৎসবের আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, শহুরে জীবন মানুষকে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যেখানে প্রতিবেশীদের নিজেদের মধ্যে কোন যোগাযোগ নেই, যেখানে একই এলাকার ভেতরে এক প্রতিবেশীর কাছে অপর প্রতিবেশীকে আগন্তুক বলে মনে হয়, যা সামাজিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী কমিউনিটিকে দুর্বল করে ফেলে। আমরা প্রতিবেশীরা এক ভবনে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করি, কিন্তু কেউ কাউকে সেভাবে চিনি না। পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও কথা হয় না। তাই সবার সঙ্গে পরিচিত হতে এবং সম্পর্ক সুদৃঢ় করতেই আয়োজন করা হয়েছে এমন উৎসব। এমন আয়োজনের প্রশংসা করে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন,আমি সব সময় বলি, সবাইকে নিয়ে আমাদের সবার ঢাকা। আজ আমরা এখানে এসে দেখলাম দাদা-দাদি, নানা-নানি তাদের নাতি-নাতনিদের নিয়ে এ আয়োজনে এসেছেন। বড়রা পাশে বসে নিশ্চিন্তে হয়তো চা খাচ্ছেন, শিশুরা খেলছেন। এর থেকে আনন্দের দৃশ্য আর কি হতে পারে। এ ধরনের আয়োজনে একে অপরের সঙ্গে মেলবন্ধন বাড়ে, যোগাযোগ বাড়ে। বিপদে-আপদে সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারি আমরা। এখানে বিভিন্ন রকমের একটিভিটি হচ্ছে যার মাধ্যমে নাগরিকদের সচেতন হওয়ার শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছি আমরা। যেমন এখানে জেব্রা ক্রসিং আঁকা হয়েছে। শিশুরা এখান থেকেই জেব্রা ক্রসিংয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়ে সচেতন হয়ে বেড়ে উঠবে। এমন আয়োজন ডিএনসিসির অন্যান্য ওয়ার্ডেও ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মেয়র আতিক বলেন, অনেকেই বলে পুরান ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্য রয়েছে। সেখানে অনেক কিছু হয়। আজ আমাদের এখানে যে আয়োজন হলো এটি অন্যান্য ওয়ার্ডেও হওয়া উচিত। তিনি বলেন, আমি সব কাউন্সিলরদের এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি প্রতিটি ওয়ার্ডে এমন আয়োজনে ডিএনসিসি সবধরনের সহায়তা করবে।

Leave a Reply