সামাজিক বন্ধন তৈরিতে গুলশানে পাড়া উৎসব
চাকরি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে দিন পার করেন রাজধানীর বাসিন্দারা। একই ভবনে পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বাস করেও একে অপরকে চেনেন না। বিশেষ কারণ ছাড়া একে অপরের সাথে দেখা হয় না মাসের পর মাস। ফলে তাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধনও গড়ে ওঠে না। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গতকাল শুক্রবার অভিজাত এলাকা গুলশানে ডিএনসিসির সহযোগিতায় পাড়া উৎসবের আয়োজন করে গুলশান সোসাইটি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিরোস ফর অল। গুলশান-২ এলাকার ৬০, ৬১ ও ৬২ নম্বর রাস্তায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ উৎসবে ছিল দেশীয় পিঠার স্টল, বায়োস্কোপ, পুতুল নাচ, ম্যাজিক শো, স্বাস্থ্যসেবা স্টল, পাটের তৈরি পণ্য। এ ছাড়া আরো ছিল উইশ বোর্ড, শিশুদের ছবি আঁকার ক্যানভাস ও রঙতুলি, ক্যারাম বোর্ড, দাবাসহ নানা ধরনের খেলার সামগ্রী। উৎসবে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি অংশ নেন কূটনীতিক পাড়ার বাসিন্দারাও। তাদের সাথে যোগ দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। তারা বিভিন্ন প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন এবং বাসিন্দাদের সাথে মতবিনিময় করেন। গুলশান সোসাইটির মহাসচিব সারওয়াত শুক্লা সিরাজ বলেন, গ্রামের মানুষের মধ্যে যে সুন্দর সামাজিক যোগাযোগ ও বন্ধন রয়েছে, সেটা তৈরি করাই হচ্ছে এ অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, শহরে দেখা যায় প্রতিবেশীরা এক ভবনে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেও কেউ কাউকে সেভাবে চেনেন না। নিজেদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। তাই সবার সাথে পরিচিত হতে এবং সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এ পাড়া উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আজ সাপ্তাহিক ছুটি। আজ গুলশানের সবার বাসায় বসে থাকার কথা ছিল কিন্তু আজ সবাই বাসা থেকে বেরিয়ে এসে এ উৎসবে যোগ দিয়েছে। তারা একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছে, ‘তুমি কই থাকো?’ এ মিলনমেলার মাধ্যমেই একটি বন্ধন তৈরি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই একটা সুন্দর সামাজিক বন্ধন ও একটি সুন্দর সমাজ। আমরা চাই সুস্থ সামাজিক চর্চা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। কিন্তু আমরা পারছি না। আমরা গান গাই ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। কিন্তু তারপরই ময়লাটা রাস্তায় ফেলে দিই, লালবাতি জ্বলার পরও আমরা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে দিই। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই এ পাড়া উৎসব। মেয়র বলেন, পাড়া উৎসবকে ছড়িয়ে দিতে চাই পুরো ঢাকা শহরে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরের সব এলাকাতেই পাড়া উৎসব আয়োজন করা হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো ঢাকাতেও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ আয়োজনটি গ্রামের উৎসব ঢাকা শহরে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। এখানে কোনো প্রতিযোগিতা নেই, আছে হৃদ্যতা। প্রতিবেশীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বসবাস করতে এ ধরনের উৎসব আয়োজন ভূমিকা রাখবে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।